Knee AsteoArthritis (KOA) ম্যানেজমেন্টে ইয়োগার ভুমিকা নিয়ে ২০২৪ সালের ১৬ মে US National Center for Biotechnology Information একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। এই গবেষণাপত্রে বলা হয় Yoga has been found to be effective in reducing pain and stiffness in KOA patients, it can also improve the physical function of patients (অর্থাৎ, হাঁটুর আরথ্রাইটিসে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যাথা প্রশমনে ও স্টিফনেস কমানোর ক্ষেত্রে ইয়োগা কার্যকর এবং ইয়োগা পেশেন্টের ফিজিক্যাল ফাংশন উন্নত করতে পারে)। গবেষণাপত্রটি পড়ে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
হাঁটুর ব্যাথাটা কী/কেনো হয়?
হাঁটু ব্যথা এমন একটি সমস্যা যা বিভিন্ন বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। হাঁটু ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেশনায় মূলত যেসব কারণ উঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছেঃ
- পেশীর দুর্বলতা
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- নিয়মিত না হাঁটা এবং
- নিয়মিত ব্যায়াম না করার ফলে পেশীর ফ্লেক্সিবিলিটি ও স্ট্রেংথ কমে যাওয়া/পেশীর দুর্বলতা
এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞান হাঁটু ব্যথার পেছনে আরো বিভিন্ন কারণ সনাক্ত করেছে, যেমনঃ
- আঘাত পাওয়া,
- আর্থ্রাইটিস,
- অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যাও একটি প্রধান কারণ।
কোমর, পা ও হাঁটুর পেশীর দুর্বলতা এবং ব্যথাঃ
হাঁটুর চারপাশের পেশীগুলোর দুর্বলতা হাঁটু ব্যথার একটি সাধারণ কারণ। বিশেষ করে কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটিয়াল এবং ক্যালফ পেশীর দুর্বলতা হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। পেশীগুলোর শক্তি ও নমনীয়তা কমে গেলে হাঁটুর স্থিতিশীলতা হ্রাস পায়, ফলে আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।
পেশীগুলোর শক্তি বৃদ্ধির উপায়ঃ
নিয়মিত ব্যায়াম পেশীগুলোর শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিচে কিছু ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো:
-
স্কোয়াট: কোয়াড্রিসেপস ও Gluteal পেশী শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
-
লাঞ্জ: হ্যামস্ট্রিংস ও কোয়াড্রিসেপস পেশী উন্নত করে।
-
লেগ প্রেস: পায়ের পেশী শক্তিশালী করতে কার্যকর।
-
হ্যামস্ট্রিং কার্ল: হ্যামস্ট্রিংস পেশী উন্নত করে।
-
স্টেপ-আপ: কোয়াড্রিসেপস ও Gluteal পেশী শক্তিশালী করে।
এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে হাঁটুর চারপাশের পেশীগুলো মজবুত হয়, যা হাঁটুর স্থিতিশীলতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা:
সুষম খাদ্যাভ্যাস হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ কমায়, ফলে ব্যথার ঝুঁকি হ্রাস পায়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে, যা হাঁটু ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা:
নিয়মিত হাঁটা হাঁটুর পেশী ও জয়েন্টের নমনীয়তা ও শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং জয়েন্টের তরল প্রবাহ বাড়ায়, যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটা হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
হাঁটু ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ইয়োগা:
ইয়োগার মাধ্যমে পেশীর শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি করে হাঁটু ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। নিম্নোক্ত ইয়োগা আসানা (Posture) গুলো হাঁটু ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর:
-
Virabhadrasana/ভীরভাদ্রাসানা (Warrior Pose): কোয়াড্রিসেপস ও হ্যামস্ট্রিংস পেশী শক্তিশালী করে।
-
Utkatasana/উৎকটাসানা (Chair Pose): হাঁটুর পেশী ও জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
-
Setubandhasana/সেতুবান্ধাসানা (Bridge Pose): হ্যামস্ট্রিংস ও Gluteal পেশী উন্নত করে।
এই আসনগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে হাঁটুর পেশী ও জয়েন্টের স্থিতিশীলতা ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়, যা হাঁটুর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
উপসংহার
হাঁটু ব্যথা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পেশী শক্তি বৃদ্ধি, সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত হাঁটা ও যোগব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করলে হাঁটুর স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, হাঁটু ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই লেখার বিভিন্ন তথ্যসুত্রঃ
- https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/
- https://www.verywellhealth.com/
- https://www.healthline.com/