Polycystic Ovary Syndrome (PCOS) হলো এক ধরনের হরমোনজনিত সমস্যা, যা নারীদের ডিম্বাশয়ে অস্বাভাবিক সংখ্যক ছোট ছোট সিস্ট (থলি) তৈরি করে এবং মাসিক চক্রকে অনিয়মিত করে। এটি মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১০-১৫% প্রজননক্ষম নারী এই সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরাঞ্চলে ১২-১৮% নারী এই সমস্যার শিকার।
PCOS রোগ হলে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
- – PCOS-এর লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- – অনিয়মিত মাসিক বা মাসিকের অনুপস্থিতি (অলিগোমেনোরিয়া বা অ্যামেনোরিয়া)
- – মুখ ও শরীরের লোম অতিরিক্ত বৃদ্ধি (Hirsutism) – মুখ, বুক ও পিঠে লোম গজানো
- – ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বক
- – ওজন বৃদ্ধি ও ওজন কমাতে অসুবিধা
- – মাথার চুল পড়ে যাওয়া বা টাক পড়া (Androgenic Alopecia)
- – মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ডিপ্রেশন
- – গর্ভধারণে অসুবিধা (Infertility)
PCOS কী কারণে হতে পারে বা হয়?
PCOS-এর কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- – ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স – ইনসুলিন হরমোন সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ডিম্বাশয়ে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
- – হরমোনের ভারসাম্যহীনতা – বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন, প্রোল্যাকটিন ও প্রোজেস্টেরনের অনিয়মিত মাত্রা।
- – জেনেটিক কারণ – পারিবারিক ইতিহাস থাকলে PCOS হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- – অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন – অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত প্রসেসড ফুড গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ইত্যাদি PCOS-এর কারণ হতে পারে।
- – মানসিক চাপ ও উদ্বেগ – দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দিয়ে হরমোন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
PCOS প্রতিরোধ করার উপায় কী? বা শৈশব/ কৈশোর থেকে কী কী ব্যবস্থা নিলে PCOS হবার সম্ভাবনা কম থাকে?
PCOS প্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন:
- – স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা – চিনি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার কমিয়ে প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
- – নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা – প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা, জগিং বা ইয়োগা চর্চা করা।
- – ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা – ওজন বাড়লে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা PCOS-এর কারণ হতে পারে।
- – স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট – ধ্যান, যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
- – মাসিক চক্র নিয়মিত রাখার চেষ্টা করা – যদি মাসিক অনিয়মিত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
PCOS সমস্যা হয়ে গেলে এর প্রতিকারের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়?
PCOS সমস্যা নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা ও জীবনধারার (Life Style) পরিবর্তন জরুরি।
(১) চিকিৎসা:
- – নিয়মিত পিরিয়ড হবার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা/উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া।
- – ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য চিকিৎসা নেয়া।
- – অতিরিক্ত লোম বৃদ্ধি, গর্ভধারণের সমস্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে অসুধ/ব্যবস্থা নেয়া।
(২) জীবনধারার (Life Style) পরিবর্তন:
- – নিয়মিত ব্যায়াম করা – ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- – সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা – শর্করা কম, প্রোটিন ও ফাইবার বেশি খাবার খাওয়া।
- – স্ট্রেস কমানো ও ঘুমের মান উন্নত করা।
PCOS সমস্যা সমাধানে ইয়োগা কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
(১) ইয়োগার ভূমিকা:
- – হরমোন নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ইয়োগা চর্চা শরীরে কর্টিসল ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- – স্ট্রেস রিলিফ: ইয়োগা মানসিক চাপ কমিয়ে PCOS-এর লক্ষণগুলোর উন্নতি ঘটায়।
- – ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়: কিছু কিছু ইয়োগা চর্চা সমগ্র শরীরে ও ইন্টারনাল অর্গানে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা ওভারির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
(২) উপকারী ইয়োগা আসানা (Yoga Postures):
PCOS মোকাবিলা করতে ইয়োগার চেয়ে ভালো কিছু নেই। আপনার নিয়মিত অনুশীলনে যেসব ইয়োগা অবশ্যই রাখতে পারেন সেগুলো হচ্ছেঃ
- – ভুজঙ্গাসানা (Cobra Pose) – রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- – সুপ্তবদ্বকোণাসানা (Reclining Bound Angle Pose) – পেলভিক অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
- – বদ্ধকোনাসানা (Bound Angle Pose) – – পেলভিক অঞ্চলের মাসল ফ্লেক্সিবিলিটি ও রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
- – বালাসানা (Child’s Pose) – মানসিক চাপ কমায়।
- – সর্বাঙ্গাসানা (Shoulder Stand) – থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- – কপালভাতি প্রণায়াম (Skull Shining Breathing) – ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক।
প্রিয় পাঠক,
একজন নারীর জীবনের জটিলতা একজন পুরুষের থেকে অনেক আলাদা। মাতৃত্ব একজন নারীকে যেমন অনন্য করে তোলে, তেমনি নারীর সাস্থ সমস্যার প্রতি অবহেলা তার সমস্যাকে দিন দিন অনেক জটিল করে তুলতে পারে। মা-বাবা অথবা একজন দায়িত্বশীল হিসেবে পরিবারের নারী সদস্যদেরকে তাদের সাস্থ সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা এবং সময় থাকতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেবার মাধ্যমে ভবিষ্যতের অনেক জটিলতা কমানো সম্ভব।
PCOS প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, নিয়মিত ইয়োগা অনুশীলন ও সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইয়োগা এর অন্যতম কার্যকর সমাধান, যা প্রাকৃতিকভাবে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। সময়মতো সচেতনতা ও উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে PCOS নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ইয়োগা কীভাবে করবেন?
৩ টি অপশন আছেঃ
১) আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের ৩০ দিনের ইয়োগা সিরিজ ভিডিওগুলো ফলো করে প্র্যাকটিস করতে পারেন। এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
২) আমাদের সাথে গ্রুপ সেশনে যুক্ত হয়ে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
৩) প্রাইভেট সেশনের মাধ্যমে আপনার সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করে পরামর্শ করা ও ইয়োগা অনুশীলনের জন্য লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
বৈজ্ঞানিক গবেষণা রেফারেন্স/ তথ্যসূত্র:
নিচে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক গবেষণা পত্রের লিংক দেয়া হলো। অনুগ্রহ করে পড়ে দেখতে পারেন। আশাকরি এগুলো আপনাকে PCOS এর ক্ষেত্রে ইয়োগার কার্যকারিতা বুঝতে সাহায্য করবে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে উতসাহিত করবে। (পড়ার জন্য টাইটেল এর উপর ক্লিক করুন)