মহিলাদের ওভারি ও জরায়ু সংক্রান্ত সাধারণ (Common) এবং বিরল (Rare) সমস্যাগুলো আলাদা করে উপস্থাপন করা হলো। প্রতিটির পাশে আনুমানিক কত শতাংশ মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন হন তা উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে লিংক দেয়া হয়েছে অথবা উৎস নীচে দেয়া হয়েছে।
সাধারণ রোগ (Common Disease):
১) Polycystic Ovary Syndrome (PCOS) / পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম: এটি একটি হরমোনজনিত রোগ যেখানে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়, যা অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধি, ব্রণ এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এর সঠিক কারণ অজানা, তবে জেনেটিক্স, অতিরিক্ত ইনসুলিন এবং প্রদাহজনিত কারণগুলি ভূমিকা রাখতে পারে। আনুমানিক ৫-১০% মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
২) Endometriosis / এন্ডোমেট্রিওসিস: এটি একটি বেদনাদায়ক অবস্থা যেখানে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আস্তরণের মতো টিস্যু জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়, যা পেলভিক পেইন, ভারী মাসিক এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এর সঠিক কারণ অজানা, তবে ঋতুস্রাবের রক্তের বিপরীত প্রবাহ, ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা এবং জেনেটিক কারণ ভূমিকা রাখতে পারে। আনুমানিক ১০% মহিলাদের মধ্যে এটি পাওয়া যায়। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
৩) Uterine Fibroids / জরায়ুর ফাইব্রয়েড: জরায়ুর পেশীতে অ-ক্যান্সারযুক্ত টিউমার যা ভারী মাসিক, পেলভিক ব্যথা এবং প্রস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হরমোন (ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন) এবং জেনেটিক্স এর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আনুমানিক ২০-৮০% মহিলাদের মধ্যে জীবনের কোনো পর্যায়ে এই রোগ দেখা যেতে পারে। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
৪) Ovarian Cysts / ওভারিয়ান সিস্ট: ডিম্বাশয়ের পৃষ্ঠে বা অভ্যন্তরে তরল বা কঠিন পদার্থে ভরা পকেট যা সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে বড় হলে ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, গর্ভাবস্থা, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং পেলভিক ইনফেকশন এর কারণ হতে পারে। প্রজনন বয়সের মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়, তবে কত শতাংশ নারী এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ LINK
৫) Pelvic Inflammatory Disease (PID) / পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ: মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ যা পেলভিক ব্যথা, জ্বর এবং অস্বাভাবিক যোনি স্রাবের কারণ হতে পারে। সাধারণত যৌন সংক্রমিত ব্যাকটেরিয়া, যেমন ক্ল্যামিডিয়া বা গনোরিয়া, এর জন্য দায়ী। আনুমানিক ৪.৪% মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।
৬) Dysmenorrhea / ডিসমেনোরিয়া (কঠিন পিরিয়ডজনিত ব্যথা): মাসিকের সময় তীব্র পেটের ব্যথা যা প্রাথমিক (কোনো সুস্পষ্ট কারণ নেই) বা গৌণ (এন্ডোমেট্রিওসিস বা ফাইব্রয়েডের কারণে) হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন এবং প্রজনন অঙ্গের সমস্যাগুলো এর কারণ হতে পারে। আনুমানিক ১৬% মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায়।
৭) Menorrhagia / মেনোরেজিয়া (অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ সহ পিরিয়ড): অস্বাভাবিকভাবে ভারী বা দীর্ঘস্থায়ী মাসিক রক্তক্ষরণ যা রক্তস্বল্পতা এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ফাইব্রয়েড, পলিপ বা রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা এর কারণ হতে পারে। আনুমানিক ৯-১৪% মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।
৮) Adenomyosis / অ্যাডেনোমায়োসিস: জরায়ুর পেশীতে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর বৃদ্ধি যা ভারী মাসিক, পেলভিক ব্যথা এবং জরায়ুর স্ফীতি সৃষ্টি করতে পারে। এর সঠিক কারণ অজানা, তবে জরায়ুর আঘাত বা অস্ত্রোপচার এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। আনুমানিক ২০-৩৫% মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায়।
বিরল রোগ (Rare Disease):
১) Ovarian Cancer / ওভারিয়ান ক্যান্সার: ডিম্বাশয়ের কোষগুলির অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি যা পেলভিক ব্যথা, ফোলা এবং ক্ষুধামান্দ্য সৃষ্টি করতে পারে। জেনেটিক মিউটেশন, বয়স এবং পরিবারিক ইতিহাস এর ঝুঁকি বাড়ায়। আনুমানিক ১.৩% মহিলাদের মধ্যে জীবনের কোনো পর্যায়ে দেখা যায়।
২) Uterine Cancer / জরায়ুর ক্যান্সার: জরায়ুর আস্তরণের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা অস্বাভাবিক যোনি রক্তক্ষরণ, পেলভিক ব্যথা এবং ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বয়স এবং স্থূলতা এর ঝুঁকি বাড়ায়। আনুমানিক ২.৮% মহিলাদের মধ্যে জীবনের কোনো পর্যায়ে দেখা যায়।
৩) Premature Ovarian Insufficiency (POI) / অকাল ওভারিয়ান ব্যর্থতা: এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ৪০ বছরের আগেই ডিম্বাশয় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ইস্ট্রোজেন উৎপাদন করে, ফলে অনিয়মিত বা বন্ধ মাসিক হয়। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনেটিক পরিবর্তন, অটোইমিউন ব্যাধি এবং কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির প্রভাব। আনুমানিক ১% মহিলার মধ্যে দেখা যায়।
৪) Asherman’s Syndrome / অ্যাশারম্যান সিনড্রোম: জরায়ুর ভেতরের টিস্যুতে আঁশ বা আঠালো টিস্যু গঠিত হয়, যা মাসিকের অভাব বা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। সাধারণত গর্ভপাত বা জরায়ুর অস্ত্রোপচারের পর ক্ষত থেকে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ১.৫% মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়, তবে সঠিক হার নির্ধারণ করা কঠিন।
তথ্যের উৎস:
- World Health Organization (WHO) – Cervical & Uterine Cancer
- National Institutes of Health (NIH) – Ovarian & Uterine Disorders
- Mayo Clinic – Pelvic Health Issues
- American College of Obstetricians and Gynecologists (ACOG) – Reproductive Health
ইনশাল্লাহ আগামীতে আমরা জরায়ু এবং ওভারির সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কিভাবে ইয়োগাকে কাজে লাগাতে পারি, সেই সম্পর্কে জানবো।